বাংলাদেশে চারুকলা শিক্ষার ইতিহাস (প্রথম অধ্যায়)

সপ্তম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - চারু ও কারুকলা | NCTB BOOK
1.9k

এ অধ্যায় পাঠ শেষে আমরা-

  • বাংলাদেশে চারু ও কারুকলা শিক্ষার সংক্ষিপ্ত ইতিহাস বর্ণনা করতে পারব।
  • বাংলাদেশে চারুকলা শিক্ষার পথিকৃৎ শিল্পীদের নাম উল্লেখ করতে পারব।
  • সমাজে শিল্প শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা করতে পারব।
Content added By

# বহুনির্বাচনী প্রশ্ন

পাঠ ১

193

যাঁরা ছবি আঁকেন তাঁরা চিত্রশিল্পী, গানের শিল্পীদের বলা হয় সংগীতশিল্পী, অভিনেতা অভিনেত্রীরা পরিচিত হন নাট্যশিল্পী বা চলচ্চিত্রশিল্পী হিসেবে। যারা নৃত্য পরিবেশন করেন তাঁরা নৃত্যশিল্পী হিসেবে পরিচিত। এভাবে সংস্কৃতি চর্চার প্রত্যেকটি বিভাগ ও বিষয়ের ভিন্ন ভিন্ন বা নির্দিষ্ট পরিচয় রয়েছে।

শিল্প ও সংস্কৃতির প্রতিটি ক্ষেত্রেই চর্চা বা অনুশীলন প্রয়োজন। ছোটোবেলা, বড়বেলা, যেকোনো বয়স থেকেই যেকোনো শিল্পকলার চর্চা করা যায়। আবার প্রাতিষ্ঠানিক বিষয়ে চর্চা করার জন্য, নির্দিষ্ট কিছু সহজ নিয়ম-কানুন মেনে অনুশীলন করতে হয়।

যেমন গান গাওয়ার জন্য সুর, তাল, লয় ইত্যাদি ভালো করে বুঝে নিতে হয়। সারেগামা বা সপ্তসুর থেকে শুরু করে অন্যান্য সুর, তাল ইত্যাদি রপ্ত করার জন্য প্রতিদিন অভ্যাস করতে হয়। যাকে সংগীত শিল্পীরা বলেন রেওয়াজ করা বা গলা সাধা। একজন সংগীত শিল্পীকে সারাজীবনই রেওয়াজ করতে হয়। সংগীতের ক্ষেত্রে যাঁরা খ্যাতিমান তাঁরা জীবনভর এই নিয়ম মেনে রেওয়াজ করার বিষয়ে যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে থাকেন।

চিত্রকলার ক্ষেত্রেও নিয়মিত ছবি আঁকতে হয়। চর্চা বা অনুশীলন করতে হয়। তবে সংগীতের ক্ষেত্রে যেমন শিশু বয়স থেকে সারেগামা ও সুর তাল লয় দীক্ষা নিতে হয় আঁকার ক্ষেত্রে শিশুদের ছবি আঁকার সাধারণ নিয়ম-কানুন জেনে ছবি আঁকার চেয়ে শিশু ইচ্ছেমতো আঁকুক, নিজের চিন্তা, স্বপ্ন ও ইচ্ছাকে রং তুলিতে তার কাগজে সহজে এঁকে ফেলুক এই স্বাভাবিকতাকেই গুরুত্ব দেওয়া হয়। শিশুকে কখনো নির্দেশ দিয়ে ছবি আঁকানো উচিত নয়। শিশু ও ছোটরা একটা নির্দিষ্ট বয়স পর্যন্ত নিজে নিজেই আঁকবে। শিশু নিজে আঁকতে পারছে বলে অপার আনন্দে খুবই সুন্দর ছবি আঁকে।

সাধারণত ষষ্ঠ শ্রেণি থেকেই ধীরে ধীরে আঁকার নিয়ম-কানুন জেনে ছবি আঁকার চেষ্টা করা ভালো, মোটামুটি পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত শিশু নিজে নিজে আঁকবে। নিয়ম-কানুন মেনে শিক্ষাগ্রহণ করাকে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা বলে। বাংলাদেশে চারু ও কারুকলার প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার কথা এবার আমরা জানব।

কাজ: কোন বিষয়ে তোমার ছবি আঁকতে ভালো লাগে, সে বিষয়ে ৫টি বাক্য লেখো।
Content added By

পাঠ ২

180

স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার আগেই ঢাকায় ১৯৪৮ সালে চিত্রকলা শেখার প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হয়। উদ্যোগ গ্রহণ করেন কয়েকজন চিত্রশিল্পী। যাঁরা কলকাতা আর্ট কলেজে শিল্পশিক্ষা সমাপন করেন। তাঁরা হলেন শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন, পটুয়া কামরুল হাসান, খাজা শফিক আহমেদ, সফিউদ্দিন আহমেদ, আনোয়ারুল হক ও শফিকুল আমিন। ১৯৪৭ সালে ভারতবর্ষে প্রায় দুইশত বছরের ব্রিটিশ শাসনের অবসান হলে ভারত দুটি স্বাধীন রাষ্ট্রে ভাগ হয়ে স্বাধীনতা অর্জন করে। একটির নাম ভারত ও অন্য অংশের নাম পাকিস্তান। পাকিস্তানের আবার দুটি অংশ পূর্ব-পাকিস্তান ও পশ্চিম-পাকিস্তান।

১৯৪৮ সালে পূর্ব-পাকিস্তানের রাজধানী ঢাকাতে চারুকলা ইনস্টিটিউটের প্রতিষ্ঠায় শিল্পীদের অনেক বাধার সম্মুখীন হতে হয়েছিল। সামাজিকভাবে সেই কালে 'ছবি আঁকা' বিষয়ের গ্রহণযোগ্যতা ছিল না। কেউ ছবি এঁকে জীবনযাপন করবে এটা কেউ ভাবতেই পারত না। কারণ-ছবি এঁকে কী হবে? ছবি এঁকে উপার্জন করার তেমন ব্যবস্থা দেশে ছিল না, সরকারি কোনো চাকরিও ছিল না।

তাহলে ছবি এঁকে কী হবে? অন্যদিকে সামাজিক কুসংস্কার ও গোঁড়ামিও একটি বড়ো বাধা ছিল। তাই শিল্পী জয়নুল আবেদিন, কামরুল হাসান, আনোয়ারুল হক, সফিউদ্দিন আহমেদ যখন সরকারকে প্রস্তাব দিলেন দেশ ভাগাভাগির পর অন্য -অনেক বিষয়ের মতো কলকাতা আর্ট কলেজের অর্ধেক পূর্ববাংলার মানুষ পায়। তাই সহজেই পূর্ববাংলার মানুষের জন্য রাজধানী ঢাকায় একটি আর্ট কলেজ প্রতিষ্ঠা করা যায়। উল্লেখিত শিল্পীরা প্রায় সবাই ছিলেন কলকাতা আর্ট কলেজের শিক্ষক ও পূর্বতন ব্রিটিশ শাসিত ভারত সরকারের কর্মচারি।

Content added By

পাঠ ৩

117

তৎকালীন পাকিস্তান সরকার খুবই অবহেলায় শিল্পীদের প্রস্তাব বাতিল করে দিল। শিল্পীরা পিছ পা হলেন না। সরকারকে বোঝালেন নতুন দেশকে সুন্দরভাবে গড়তে হলে, মানুষের জীবন-যাপনকে সুন্দর ও রুচিশীল করার জন্য সমাজে শিল্পীদের প্রয়োজন আছে। কয়েকটি উদাহরণ তাঁরা সে সময় উল্লেখ করেন। যেমন-

১. সাধারণ মানুষকে স্বাস্থ্যসেবা দিতে হবে এবং তাদেরকে বিভিন্ন রোগ থেকে নিরাময় পেতে হলে ছবি এঁকে পোস্টার তৈরি করে খুব সহজেই বোঝানো যায়। যা বইপুস্তকে লেখালেখি করে বোঝানো সহজ নয়। কারণ দেশে লেখাপড়া জানা মানুষের সংখ্যা খুব কম।
২. সরকারের বিভিন্ন বিষয়ের প্রচার কাজে-রাস্তায় হাঁটাচলা, বাস-ট্রাক চলাচলের নিয়ম-কানুন ইত্যাদির জন্য পোস্টার ও প্রচারপত্রের জন্য শিল্পীর প্রয়োজন হবে।
৩. সহজে চাষ করা, সেচ দেওয়া, পোকামাকড় থেকে সাবধান থাকা থেকে শুরু করে কীভাবে কৃষি ফলন বাড়ানো যায় তা ছবি এঁকে সাধারণ কৃষককে বোঝানো যায়।
৪. মানচিত্র আঁকা, স্কুল-কলেজের পুস্তকের জন্য ছবি আঁকা, চিকিৎসাবিদ্যা ও কারিগরিবিদ্যার বই পুস্তকের জন্য শিল্পীর প্রয়োজন জরুরি।

৫. সদ্য নতুন দেশে শিল্প কারখানা ধীরে ধীরে গড়ে উঠবে। এসব কারখানার উৎপাদনের পর বাজারে ও বিদেশে রপ্তানি করতে গেলে নানারকম রঙে মোড়ক তৈরি করতে হবে। নকশা ও ছবি আঁকতে হবে। ছবি এঁকে বিজ্ঞাপন করতে হবে।

সুতরাং দেশের কাজে, জনগণের প্রয়োজনে ও কল্যাণে সমাজে চিত্রশিল্পীদের প্রয়োজন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই শিল্পী তৈরি করার জন্য একটি কলেজ বা প্রতিষ্ঠান যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সরকারিভাবেই শুরু করতে হবে।

Content added By

পাঠ ৪

135

চিত্রশিল্পীরা এমনি নানারকম যুক্তি দিয়ে তৎকালীন পাকিস্তান সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে তুলে ধরলেন যে চারুকলা শিক্ষা দেশের প্রয়োজনেই প্রতিষ্ঠা করা উচিত। শিল্পীদের এই উদ্যোগকে প্রশংসা করে এগিয়ে আসেন কয়েকজন বিদ্যোৎসাহী বাঙালি। বিজ্ঞানী ড. কুদরত-এ-খুদা তখন পূর্ব-পাকিস্তান সরকারের জনশিক্ষা বিভাগের প্রধান (ডি পি আই)। তিনিও সরকারকে বোঝালেন চারুকলা শিক্ষা অবশ্যই প্রয়োজন। সরকারি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা সলিমুল্লাহ ফাহমি, আবুল কাশেম প্রমুখ শিল্পীদের পাশে এসে দাঁড়ালেন। তাঁরা নানাভাবে সরকারের চারুকলা শিক্ষার প্রতি অনীহা ও বিরূপ মনোভাবকে সরিয়ে বিষয়টির প্রয়োজনকে উপলদ্ধি করার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যেতে থাকেন। সেই সময়ে লেখক, সাংবাদিক ও সংস্কৃতির মানুষরাও ছবি আঁকা শিক্ষার গুরুত্ব বিষয়ে খবরের কাগজে লেখালেখি শুরু করলেন। তাঁরা হলেন ড. সারোয়ার মোরশেদ, বোরহান উদ্দিন খান জাহাঙ্গীর, মুনীর চৌধুরী, শওকত ওসমান, অজিত গুহ, সিকানদার আবু জাফর, ওয়াহিদুল হক প্রমুখ। লেখালেখি ও আলোচনার ফলে সরকারও ধীরে ধীরে নমনীয় হলেন। চারুকলা প্রতিষ্ঠান শুরু হবার ৪/৫ বছরের মধ্যেই চিত্রশিল্পীরা প্রমাণ করে চললেন যে কাজ মানুষকে আনন্দ দেয় ও মানুষের কল্যাণে ব্যবহৃত হয় সে কাজ কখনো খারাপ কিছু হতে পারে না। চিত্রকলা শিক্ষা ও চর্চা দেশের সার্বিক উন্নয়ন ও মানুষের কল্যাণের অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

কাজ: ছবি আঁকা কল্যাণকর কেন?
Content added By

পাঠ ৫

142

অনেক চেষ্টার পর অবশেষে ছবি আঁকা শিক্ষার জন্য একটি বিদ্যাপীঠ, তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের রাজধানী এই ঢাকা শহরে প্রতিষ্ঠিত হলো। তারিখ ছিল ১৫ নভেম্বর ১৯৪৮ সাল। নবাবপুরে ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজের দুটি কামরায় শুরু হলো প্রথম ছবি আঁকার প্রতিষ্ঠান। নাম দেওয়া হলো গভর্নমেন্ট আর্ট ইনস্টিটিউট। ১২ জন ছাত্র ভর্তি হয়েছিল প্রথম বছর। অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ পান শিল্পী জয়নুল আবেদিন। অন্য শিক্ষকরা হলেন আনোয়ারুল হক, খাজা শফিক আহমেদ, কামরুল হাসান, সৈয়দ আলী আহসান ও শফিকুল আমিন। এঁরা প্রত্যেকেই কলকাতা আর্ট কলেজে পড়েছেন। জয়নুল আবেদিন, আনোয়ারুল হক ও সফিউদ্দিন আহমেদ কলকাতা আর্ট কলেজে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগও পেয়েছিলেন। ১৯৪৭-এ দেশ ভাগ হয়ে গেলে তাঁরা ঢাকায় চলে আসেন। তারপর প্রায় এক বছর সংগ্রাম করে ঢাকায় কলকাতার অনুরূপ একটি চিত্রকলা কলেজ প্রতিষ্ঠা করলেন। দুই বছর পর শিক্ষক হিসেবে যোগ দিলেন শিল্পী মোহাম্মদ কিবরিয়া। তিনিও কলকাতা আর্ট কলেজে লেখাপড়া করেছেন।

কাজ: প্রথম ছবি আঁকার প্রতিষ্ঠানের নাম ও অধ্যক্ষের নাম কী?
Content added By

পাঠ ৬

152

চারু ও কারুকলার পথিকৃৎ শিল্পীরা

১৯৪৮ সালে শুরু হয় বাংলাদেশ তথা তৎকালীন পূর্ব-পাকিস্তানে শিল্পশিক্ষার সূচনা। যাঁরা এ আন্দোলন অর্থাৎ শিল্পশিক্ষার আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তাঁদেরকেই আমরা বলব পথিকৃৎ শিল্পী। কারণ তাঁরা পথ দেখিয়েছিলেন বলেই আজ আমরা ছবি আঁকা শিখছি। এ বিষয়ে পড়াশুনা করছি। এ প্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষাগ্রহণ করে পরবর্তীকালে দেশের শিল্পশিক্ষা প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছিলেন বেশকিছু শিল্পী। প্রথম ব্যাচের ১২জন শিল্পীর মধ্যে পরবর্তীকালে দুজন খ্যাতিমান শিল্পী হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছিলেন। একজন শিল্পী আমিনুল ইসলাম এবং দ্বিতীয়জন শিল্পী সৈয়দ শফিকুল হোসেন। অন্য দশজনের বেশিরভাগই চিত্রশিল্পী হিসেবে বা চিত্রকলাকে পেশা হিসেবেই গ্রহণ করে সমাজে চিত্রশিল্পের প্রয়োজনীয়তা বোঝাতে বিশেষ ভূমিকা রেখেছিলেন। আমিনুল ইসলাম বাংলাদেশের শিল্পকলা চর্চাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পেরেছেন। বাংলাদেশের দীর্ঘ সময়ের শিল্পকলার ধারাবাহিক উন্নতি ও প্রতিষ্ঠায় তাঁর বিশাল অবদান রয়েছে। আমিনুল ইসলাম ও সৈয়দ শফিকুল হোসেন চারুকলা ইনস্টিটিউটে অধ্যক্ষ হিসেবেও দীর্ঘদিন নিয়োজিত ছিলেন।

Content added By

পাঠ ৭ ও ৮

150

চারুকলা ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করেই শিল্পী জয়নুল আবেদিন ও অন্য প্রতিষ্ঠাতা শিল্পীরা ক্ষান্ত থাকেন নি। শিল্পীরা যাতে সমাজের প্রয়োজনে নানাভাবে ছবি আঁকাকে কাজে লাগাতে পারে সে দিকেও তাঁরা নজর দিয়েছিলেন। সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে শিল্পীদের জন্য সম্মানজনক পদ তৈরি, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চিত্রশিল্পের প্রয়োজনীয়তা ইত্যাদি বিষয়ে আলোচনা করে জনমত তৈরির জন্য শিক্ষক ও ছাত্ররা যৌথভাবে চেষ্টা চালিয়ে যেতে থকেন। এই চেষ্টা ছিল একটা সাংস্কৃতিক আন্দোলন। কাজটা মোটেই সহজ ছিল না। অন্তত দশ থেকে বারো বছর লেগেছে সমাজ ও রাষ্ট্রকে বোঝাতে যে, একটা সুন্দর সমাজ ও সুন্দর রাষ্ট্র তৈরিতে চিত্রশিল্প অন্যান্য পেশার মতোই গুরুত্বপূর্ণ। যেমন- প্রকৌশলী, ডাক্তার, শিক্ষক, প্রশাসক, স্থপতি, অভিনেতা, সংগীতশিল্পী উন্নত সমাজের জন্য প্রয়োজন, তেমনি চিত্রশিল্পীরাও সুন্দর সমাজ গঠনে বিশাল ভূমিকা রাখতে পারছে

তাই খুব সহজেই বলা যায়, বাংলাদেশের শিল্পকলাকে যথাযথ মর্যাদায় প্রতিষ্ঠা করার জন্য শিল্পী জয়নুল আবেদিন এক বলিষ্ঠ নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। তাঁর সঙ্গে সমানভাবেই সংগ্রাম করেছেন শিল্পী আনোয়ারুল হক, শিল্পী সফিউদ্দিন আহমেদ, পটুয়া কামরুল হাসান, খাজা শফিক আহমেদ, শফিকুল আমিন ও শিল্পী মোহাম্মদ কিবরিয়া। প্রথম ১২ বছরের শিল্পশিক্ষায় যাঁরা এসেছিলেন তাঁরাও সমান নিষ্ঠা নিয়ে তাঁদের গুরুদের সঙ্গে কাজ করেছেন। ফলে বাংলাদেশের নিজস্ব শিল্পচেতনার একটি বৈশিষ্ট্য ও রূপ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। যা বাংলাদেশের শিল্পকলা চর্চাকে আন্তর্জাতিক মানে পৌঁছে দিয়েছে। তাঁদের মধ্যে যাঁদের উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রয়েছে তাঁরা হলেন- কাইয়ুম চৌধুরী, রশীদ চৌধুরী, মূর্তজা বশীর, আবদুর রাজ্জাক, আবদুল বাসেত, হামিদুর রহমান, সৈয়দ জাহাঙ্গীর, সমরজিৎ রায় চৌধুরী, হাশেম খান, রফিকুন নবী, নিতুন কুণ্ডু, দেবদাস চক্রবর্তী, আবু তাহের, মাহমুদুল হক, মনিরুল ইসলাম, আবুল বারক আলভী প্রমুখ।

Content added By

নমুনা প্রশ্ন

274

শুদ্ধ বাক্যে টিক চিহ্ন () দাও।

১. যারা ছবি আঁকেন তাঁরা হলেন- নাট্যশিল্পী। চিত্রশিল্পী। নৃত্যশিল্পী
২. যারা নাটকে ও চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন তাঁরা- কারুশিল্পী। অভিনেতা/ চিত্রশিল্পী
৩. যারা চমৎকার গান গাইতে পারেন তাঁরা হলেন- অভিনেতা/ সংগীতশিল্পী। নাট্যশিল্পী
৪. শিশুকে ছবি আঁকা শেখাবার জন্য প্রথমেই ভালো করে নিয়ম-কানুন শিখিয়ে দিতে হয়। প্রথমেই নিজের ইচ্ছেমতো আঁকতে দিতে হয়।
৫. সাধারণত- যষ্ঠ শ্রেণি থেকে ধীরে ধীরে ছবি আঁকার নিয়ম-কানুনগুলো জেনে শিশুরা ছবি আঁকবে/ প্রথম শ্রেণি থেকে নিয়মকানুন জেনে ছবি আঁকবে।
৬. আদিম মানুষেরা- ক্যানভাসে ছবি আঁকত। গুহার গায়ে ছবি আঁকত। কাগজে ছবি আঁকত।
৭. আদিম মানুষেরা ছবি আঁকার রং-তুলি-শহরের দোকান থেকে সংগ্রহ করত। নিজেরা মাটি, পশুর চর্বি ও পাথর সূঁচালো করে তৈরি করে নিত।
৮. প্রায় পনেরো-ষোলো শতক পর্যন্ত শিল্পীরা-বড়ো বড়ো আর্ট কলেজে গিয়ে ছবি আঁকা শিখত/গুরু বা শিল্প শিক্ষকের ছবি আঁকার কাজে সহায়তা করতে গিয়ে গুরুর কাছেই শিখে নিত।
৯. পাকিস্তান সরকার নিজেরাই আর্ট কলেজ তৈরি করে তারপর শিল্পীদের ডাকেন। চিত্রশিল্পী জয়নুল আবেদিন, কামরুল হাসান, সফিউদ্দিন আহমেদ, আনোয়ারুল হক, শফিকুল আমিন প্রমুখদের দাবির কারণে শিল্পশিক্ষার প্রতিষ্ঠান শুরু করেন।
১০. ছবি আঁকা শেখার প্রথম প্রতিষ্ঠানের নাম ছিল- গভর্নমেন্ট আর্ট কলেজ/ গভর্নমেন্ট আর্ট ইনস্টিটিউট।
১১. গভর্নমেন্ট আর্ট ইনস্টিটিউটের যাত্রা শুরু হয়- ১৪ই আগস্ট ১৯৪৭/১৫ই নভেম্বর ১৯৪৮/২২শে আগস্ট ১৯৪৮।
১২. শিল্পকলা শিক্ষার নিজস্ব ভবন- বর্তমান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদেই গভর্নমেন্ট আর্ট ইনস্টিটিউটটির ক্লাস শুরু হয়। নবাবপুরে ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজের মাত্র ২টি কামরায় শুরু হয়।
১৩. উন্নত সমাজ গঠনে প্রকৌশলী, ডাক্তার ও বিজ্ঞানীর মতো- চিত্রশিল্পীদেরও ভূমিকা রয়েছে। চিত্র শিল্পীরা শুধু নিজেদের জন্য ও প্রদর্শনী করার জন্য ছবি আঁকে।

সংক্ষেপে উত্তর দাও।

১. শিশু বয়সে ও বিদ্যালয়ে পড়ার সময় কীভাবে ছবি আঁকবে?
২. বর্তমান বাংলাদেশে বা পূর্ব পাকিস্তানে কীভাবে, কোন সময়ে এবং কাদের চেষ্টায় শিল্পকলা শিক্ষার প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠানটির প্রথম নাম কী ছিল?
৩. গভর্নমেন্ট আর্ট ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠার জন্য শিল্পীরা সরকারকে কোন কোন উদাহরণ দিয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গুরুত্ব বুঝিয়েছিলেন?
৪. প্রথম বছর কতজন ছাত্র ভর্তি হয়েছিল? তাঁদের সম্পর্কে লেখো।
৫. প্রথম ১২ বছরে শিক্ষা লাভ করে কোন কোন শিল্পীরা দেশের সংস্কৃতি বিকাশে ও শিল্পকলা শিক্ষায় অবদান রেখেছেন?
৬. ছবি আঁকতে গিয়ে তোমার কী কী অনুভূতি কাজ করে?
৭. চারু ও কারুকলা চর্চার গুরুত্বসমূহ কী কী?
৮. মহান মুক্তিযুদ্ধে চিত্রশিল্পীদের অবদান কী?

Content added By
Promotion
NEW SATT AI এখন আপনাকে সাহায্য করতে পারে।

Are you sure to start over?

Loading...